বাসা বদলের ঝুটঝামেলা!
বাসা বদলের ঝুটঝামেলা!
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
বাসা বদলের সময় ঘরের সব জিনিসপত্র পৌঁছে দিতে নগরে রয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান
এই তো কিছুদিন আগেও বাসা কিংবা অফিস বদলাতে হলে পড়তে হতো নানা ঝামেলায়। মালপত্র স্থানান্তর নিয়ে পড়তে হতো বিপাকে। আর যাকে দিচ্ছেন এই মালপত্র স্থানান্তরের দায়িত্ব, সে-ই বা কতটা বিশ্বস্ত। ঠিকমতো সবকিছু পৌঁছে দেবে তো? এখন ঢাকা শহরে গড়ে উঠেছে বাসা কিংবা অফিস বদল করার অনেক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে ধানমন্ডি ৯ নম্বর সড়কে একটি বাসা পেলেন এনসিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফয়সাল শাহরিয়ার। বাসা তো পাওয়া গেল, এবার আগের বাসার জিনিসপত্র নতুন বাসায় আনার পালা। দীর্ঘদিনের এই সংসারে জিনিস তো আর কম জোটেনি! তাই আসবাবপত্র ঠিকমতো নতুন বাসায় নেওয়া যাবে তো? তার ওপর এসি, ফ্যান, চুলা—সবই তো নতুন করে লাগাতে হবে। শেষে সবকিছুর দায়িত্ব দিলেন নগরের একটি বাসা বদল করা প্রতিষ্ঠানের হাতে। ব্যস, তারাই মিটিয়ে দিল সব সমস্যা। নগরে প্রতি মাসেই বাসা কিংবা অফিস বদল করতে হয় অনেককেই। সেই সঙ্গে আগের বাসা থেকে জিনিসপত্র নতুন বাসায় নেওয়া, নতুন করে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতিরসংযোগসহ রয়েছে নানা ঝামেলা। এসব ঝামেলা নিরসন করে বাসা-অফিস বদল করার অনেক প্রতিষ্ঠান।
সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠান
বড় ভাইয়ের হাত ধরে বাসা-অফিস বদল করার প্রতিষ্ঠান ‘প্যাক অ্যান্ড শিফট’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন কে এ খসরু। প্যাক অ্যান্ড শিফট দেশের প্রথম বাসা-অফিস বদল করার প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করেন তিনি। ১৯৯৮ থেকে পথচলা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান। বাসা বদলের জন্য এ প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, মাইলসের সাফিন আহমেদ।এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সাহায্যে ঠিকানা বদল করেছে। বাসা-অফিস শিফটিং করার প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যাবে তাদের ওয়েবসাইটে (www.packnshift.com)। বাসা বদলে সাহায্য করে এমন আরও কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে—দরকারি বাসা বদল, আলিফ এন্টারপ্রাইজ,প্রগ্রেসিভ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রত্না ট্রান্সপোর্ট, বন্যা এন্টারপ্রাইজ, বলাকা এন্টারপ্রাইজ, মজনু এন্টারপ্রাইজ। এ ছাড়া মিরপুর, জিগাতলা, গাবতলী,খিলগাঁও, তেজগাঁও, শাহজাহানপুর, হাতিরপুল বাজার, সাতরাস্তা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, সায়েদাবাদ, ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ডে গিয়েও পেতে পারেন বাসা বদলের জন্য পিকআপ, ঠেলাগাড়ি ও রিকশাভ্যান।
যেসব সেবা দেওয়া হয়
আসবাবপত্র স্থানান্তর করা ছাড়াও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রিক যন্ত্র যেমন এসি, ফ্যান, লাইট, ওয়াশিং মেশিন, গ্যাসের চুলা স্থানান্তর ও ফিটিং করে। একই সঙ্গে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে বিকল যন্ত্রও মেরামত করিয়ে দেয়। তবে এ জন্য আপনাকে আলাদা অর্থ ব্যয় করতে হবে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আবার পুরোনো আসবাব কেনে। যাঁরা নতুন বাসায় নতুন আসবাব বসাচ্ছেন, তাঁরা পুরোনো আসবাব বিক্রি করতে পারেন এদের কাছে।
সার্ভিস চার্জ কত
এক টন পিকআপে মাল স্থানান্তর করতে খরচ পড়বে ৩৫০০-৪৫০০ টকা। দুই টন পিকআপে ৪০০০-৪৫০০, তিন টন পিকআপে ৫০০০-৫৫০০, চার টন পিকআপে ৭০০০-৭৫০০ ও পাঁচ টন পিকআপে ৮৫০০-৯০০০ টাকা খরচ পড়বে। তবে দূরত্ব ও কত তলায় মালপত্র স্থানান্তর করা হবে, এর ওপর নির্ভর করে খরচ কম-বেশি হয়। আর যদি ঢাকার বাইরে মালপত্র স্থানান্তর করতে হয়, এর জন্য খরচের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে আলোচনা সাপেক্ষে। এসি, ফ্যান খোলা ও লাগানো বাবদ খরচ পড়বে যথাক্রমে ৩৫০০ ও ৩০০টাকা।
কিছু সতর্কতা
l প্রথমেই বাক্সবন্দী করুন আপনার শৌখিন জিনিসপত্র।
l ছোট জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি, তাই ছোট জিনিসপত্র আলাদা করে একটি প্যাকেটে ভরে নিন।
l কাচের জিনিসপত্র অবশ্যই আলাদা করে প্যাকেট করতে হবে। প্রয়োজনে আগেই বাজার থেকে কিছু কার্টন কিনে রাখতে পারেন।
l টিভি, কম্পিউটার, ফ্রিজ, ওভেন একটু বাড়তি যত্ন নিয়ে প্যাক করুন।
l আসবাবে যেন দাগ না পড়ে, এর জন্য মোটা কাগজে মুড়িয়ে নিতে পারেন। রশি দিয়ে বাঁধার সময় রশির নিচে পুরোনো পত্রিকা ভাঁজ করে দিলে দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।
l আসবাব খোলার পর সু্ক্র যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
l সম্ভব হলে সব প্যাকেট আলাদা করে চিহ্নিত করুন এবং মোট কতটি প্যাকেট এর হিসাব রাখুন।
বাসা বদলের আগে আগে- কে এ খসরু
বাসা বদলে ঝক্কি-ঝামেলার শেষ নেই। আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি সেরে নিলে ঝামেলা ছাড়াই কাজটি শেষ করতে পারেন।
ফার্নিচার : যেসব ফার্নিচার পুরনো হয়ে গেছে সেগুলো নতুন বাসায় ওঠানোর আগে বার্নিশ করিয়ে নিন। আর বিক্রি করতে চাইলে পুরনো ফার্নিচার ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনো ফার্নিচার খোলার প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ ফার্নিচার মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলুন। অধিক নিরাপত্তার জন্য চট দিয়েপেঁচিয়ে নিন।
ক্রোকারিজ ও কাপড়-চোপড় : কাচের জিনিসপত্র, শোপিস পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে কার্টন, বালতি অথবা পাতিলে রাখুন। কাপড়-চোপড়, চাদর, পর্দা ইত্যাদি কার্টনে ভরে স্কচটেপ লাগিয়ে সুতলি দিয়ে বেঁধে নিন। কোন কার্টনে কি রাখলেন তা মনে রাখার জন্য মার্কারি পেন দিয়ে লিখে রাখুন। রান্নাঘরের হাঁড়িপাতিল এবং অন্যান্য ক্রোকারিজের জিনিস বস্তায় ভরে নিন।
ব্যক্তিগত ও মূল্যবান জিনিসপত্র : গহনা, ঘড়ি, মোবাইল, সিডি-ভিসিডি, দামি শোপিস, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ইত্যাদি আলাদা করে ব্যক্তিগতভাবে বহন করুন।শিফটিংয়ের সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা-পয়সা না রাখাই ভালো।
ইলেকট্রিক আইটেম : ঘরের ইলেকট্রনিঙ্ জিনিসপত্র টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি অরিজিন্যাল কার্টনে রাখাই ভালো। যদি কার্টন না থাকে ককশিট সংগ্রহ করে এয়ারকন্ডিশন, ফ্যান, গিজার, আইপিএস ইত্যাদির জন্য একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের সঙ্গে আগে থেকেই আলোচনা করে নিন।
কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন : ওই কাজগুলো শেষ করতে ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো সংগ্রহ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কার্টনের জন্য নয়াবাজার ও মিরপুর-১। চট সংগ্রহের জন্য কারওয়ান বাজার, কিচেন মার্কেট ও
মিরপুর-১। ফার্নিচার মিস্ত্রি, বার্নিশ ও পুরনো ফার্নিচার বিক্রির জন্য গুলশান-১, পান্থপথ, শেওড়াপাড়া বা যেকোনো ফার্নিচারের দোকানে খোঁজ নিতে পারেন।
Comments